ঢাকায় নিয়ে ঋণ দেবে বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সাইফুল

প্রধান উপদেষ্টার তহবিল থেকে বিনা সুদে এক লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে নীলফামারীর গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ফরম পূরণের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এসব মানুষকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত করতে চেয়েছিলেন তিনি। প্ল্যাটফর্মটির মূল স্লোগান ‘লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করব, বিনা সুদে পুঁজি নেব’।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীতে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মটির পরিচালনা করতেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার রনচন্ডী ইউনিয়নের বড়ভিটা এলাকার বাসিন্দা ও রনচন্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম। উপজেলার বড়ভিটা বাজারে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি অফিস খোলেন সাইফুল ইসলাম। সেখানে তিনি সাধারণ মানুষকে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা লোন দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করার জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেন।
গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মাঠকর্মীরা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ১০০ টাকা নিয়ে একটি ফরম পূরণ করান। পরে তারা সেই টাকা সাইফুলের কাছে জমা করেন। সেসময় তারা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছে ১০০ টাকা নিয়ে ফরমপূরণ করিয়ে তাদের ঢাকায় মহাসম্মেলন যোগ দেওয়ার কথা বলেন। তারা জানান ঢাকায় মহাসম্মেলন হওয়ার পরে বিদেশে পাচার হওয়া সব টাকা ফেরত আসবে। তারপর তারা ফরমপূরণ করা মানুষদের ঋণ দেবেন।

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, গ্রামে কয়েকজন লোক এসে জানান সরকারের পাচার হওয়া সব টাকা অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরিয়ে আনবেন। তারা ঢাকায় একটি মহাসম্মেলন করার পরে এসব টাকা ফিরিয়ে এনে গ্রামের সাধারণ মানুষকে এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবেন। গ্রামের সাধারণ মানুষকে এসব প্রলোভনে দেখিয়ে ফরমপূরণ করে তাদের থেকে ১০০ টাকা করে টাকা নেন। পরে মাঠকর্মীরা তাদের এক কেজি আটা দেওয়ার কথা বলে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে যায়।
আনারুল হোসেন নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমাদেরকে যা বলছে আমরা সরল মনে বিশ্বাস করে টাকা, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। আমরা গরিব মানুষ। এতো কিছু তো বুঝি না। আমাদের তো বিনাসুদে লোন দেওয়ার কথা ছিল।
উত্তর দুরাকুটি এলাকার বাসিন্দা ও অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মাঠকর্মী জাহানারা বলেন, আমরা সাইফুল সাহেবের অধীনে কাজ করেছি। তিনি আমাদের নিয়ে মিটিং করেছিলেন সেসময়। আমরা সে অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফরমপূরণ করেছি। যারা ফরম পূরণ করেছেন তাদের থেকে ১০০ টাকা করে টাকা নিয়েছি। আমরা এই টাকা সাইফুলের কাছে জমা দিতাম। তিনি আবার এখান থেকে আমাদের মাসে কিছু টাকা বেতন দিতেন। আমাদের অফিস থেকে আপাতত কিছু দেবে না পরে যখন ঋণ দেওয়া হবে তখন আমরা নিয়মিত বেতনভুক্ত হব।

বাহাগিলী এলাকার বাসিন্দা ও অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ মাঠকর্মী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি একাই ৫০ হাজারের বেশি ফরমপূরণ করেছি। এখন হিসাব করেন কত টাকা হয়। এ টাকা আমরা আবার সাইফুলের কাছে জমা দিয়েছি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কারো কাছে কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। এসব বানোয়াট কথা। যারা বলছে তাদের অভিযোগ দিতে বলেন।
কিশোরগঞ্জ থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি এরকম একটি সংগঠনের ঋণ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা নেয়ার কথা শুনেছি। তবে, এ বিষয়ে কেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *