“চুই ঝাল উৎপাদন করে লাভবান কুড়িগ্রামের কৃষকরা”

চুইঝাল দেখতে অনেকটা পানের সমগোত্রীয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম পিপার চাবা। পিপারসি পরিবারের এই গাছ লতানে। সপুষ্পক এই গাছের পাতা লম্বা ও পুরু। গাছের কাণ্ড বা লতা ভরপুর ঝালের স্বাদে। ঝাল ছাড়াও এর নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ আছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অংশে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইলে চুইঝালের বেশি ব্যবহার হয়। তবে জনপ্রিয়তার কারণে এখন অন্যান্য জেলাতেও এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। তেমনি কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার মধ্যে চার উপজেলাতেই ওষুধীগুন সম্পন্ন চুইঝাল প্রাকৃতিকভাবে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে এর চাহিদা কুড়িগ্রাম জেলার বাইরে বেশি।

dhakapost

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে রাজারহাট, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারীতে ব্যক্তি উদ্যোগে চুইঝাল চাষ হচ্ছে। লতা জাতীয় উদ্ভিদটির চাহিদা দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ বাড়ির বিভিন্ন ফলজ বনজ ও সুপারি গাছে এর ব্যাপক আবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরগাছা জাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় এর চাষে বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় না। যে কোনো গোছের গোড়ায় সামান্য সার দিয়ে চুইঝালের একটি লতা রোপণ করলেই স্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। গাছের বয়স যত বাড়তে থাকে এর শিকড়, লতা এবং কাণ্ডও ততো মোটা হতে থাকে। একটি চুইগাছ তিন বছর বয়স হলেই পরিপক্ব এবং বিক্রি উপযোগী হয়। এছাড়া আরও বেশী বয়সী গাছ বিক্রি করলে তার কাণ্ড ও লতা বেশী মোটা হয় এবং দামও বেশী পাওয়া যায়। পাঁচ বছর বয়সী একটি চুই দুই থেকে তিন মণ ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিমণ চুই ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। 

dhakapost

চাষিরা জানান, মাটির তারতম্যের কারণে কোনো কোনো গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। সেক্ষেত্রে ছত্রাক প্রতিরোধী কীটনাশক স্প্রে করলে সহজেই নিরাময় করা যায়। চুইঝাল মূলত মাংস জাতীয় তরকারিতে ব্যবহার করলে এর স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধি পায়।

জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের চাকেরকুটি এলাকার হোসেন আলী বলেন, আমি ২৫-৩০ বছর যাবত বাড়ির বিভিন্ন গাছে চুইঝাল চাষ করছি। প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করি। চুইঝাল চাষে তেমন খরচ নেই। আমাদের প্রায় ২০০-২৫০টির মতো গাছে চুইঝাল রয়েছে। এছাড়া আমার গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কম বেশি চুইঝালের গাছ রয়েছে।

একই এলাকার সাঈদুর রহমান বলেন, গ্রামের অনেক মানুষের চুইঝাল চাষ করা দেখে আমি গত চার বছর আগে কিছু গাছে লাগিয়েছি। একবার বিক্রি করেছি। কোনো প্রকার ব্যয় ছাড়াই লাভ হয়েছে। আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা ভাবনা করছি।

dhakapost

শহিদুল ইসলাম বাচ্চু নামে একজন বলেন, চুইঝাল চাষে আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির যেকোনো গাছে চাষ করা যায়। এ গাছটি চাষে তেমন খরচও নেই। পরিচর্চাও করতে হয় না তেমন। আমরা চুইঝাল চাষে ভালোই আয় করছি।

নাগেশ্বরী কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, চুইঝাল মসলা ও ওষুধীগুন সম্পন্ন গাছ। উপজেলার চাকেরকুটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় এ গাছটি আছে। এ গাছে তেমন কোনো পরিচর্চা করতে হয় না। বিশেষ করে বাগান বাড়িতে যে গাছগুলো আছে তার গোড়ায় লাগালে হয়ে যায়। কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার কারণে দিন দিন চুইঝাল চাষ বাড়ছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে কিনে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বিক্রি করছে। ওইসব এলাকায় গাছটির অনেক কদর রয়েছে।

dhakapost

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষক ও অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, চুইঝাল মূলত লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি তরকারিতে স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া ব্যাথা, সর্দি-কাশি ও জ্বর নিরাময়েও এর ভূমিকা অপরিসীম। আর চুঁইঝাল নিয়ে গবেষণা করে এর চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চুইঝাল চাষ বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রামে তরকারিতে এটির কদর কম থাকলেও, খুলনা বিভাগে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *