বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাহফুজা আক্তার। অভিযোগ রয়েছে- বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছেন প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। শিল্পী, কলাকুশলী, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও অনুষ্ঠান নির্মাণ না করেই বিলের কোটি টাকা তুলে নিয়ে সাড়ে ১৫ বছরে দেশে-বিদেশে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা যায়, গত বছরের ৭ মার্চ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা দেন চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজিত রায়। অভিযোগটি গ্রহণ করে বিভাগীয় তদন্তের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় দুদক।
একই বছরের ১৯ মার্চ সংগীত শিল্পী অসিত রঞ্জন বিশ্বাস এবং শিল্পী সমাজের পক্ষে সংগীত শিল্পী রুবেল মিয়া মহাপরিচালক বরাবর বিভিন্ন অভিযোগ দেন। এছাড়াও মাহফুজার বিরুদ্ধে ১৩২ পৃষ্টার বিস্তারিত একটি অভিযোগ দুদকে জমা হয়। অভিযোগ যাচাই ও খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকাকালীন ২০২২ সালে পুরো এক বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেই ৬৩৯টি অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেন মাহফুজা। অসংখ্য অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার না করেও নির্মাণ দেখিয়ে মোট ৭৯ লাখ চার হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এছাড়াও এক কোডের টাকা আরেক কোডে ব্যবহার দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন এক কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এর বাইরে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিপিআর-এর নিয়ম না মেনে দৈনিক ২৫ হাজার টাকা করে ক্রয় দেখিয়ে ৪৭ লাখ চার হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন মাহফুজা। চট্টগ্রাম কেন্দ্রে যোগদানের পর বিভিন্ন ফার্নিচার ও পর্দা ক্রয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন ২১ লাখ সাত হাজার টাকা।
গত ১৩ নভেম্বর ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাহফুজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর মধ্যে বিটিভির শিল্পী সম্মানী খাত থেকে তিন কর্মকর্তার যোগসাজশে ১৩ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, তিন মিলিয়ন ডলার দিয়ে কানাডায় একটি বাড়ি কিনেছেন মাহফুজা। এছাড়াও ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে তার প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ। রাজধানীর ভাটারায় আছে আটতলা একটি বাড়ি, গুলশান-নিকেতনে তিন হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, রংপুরের মিস্ত্রিপাড়ায় সাত কাঠা জমিতে ছয়তলা বাড়ি, নিউ জুম্মাপাড়ায় আরো দুটি একই ধরনের বাড়ি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুষ্ঠান নির্মাণের নামে বাজেটের অতিরিক্ত ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুমোদন না নিয়েই খরচের নামে আত্মসাৎ করেন মাহফুজা। বিভিন্ন নাটকের প্রযোজক হয়ে ভুয়া নামে চেক ইস্যুর মাধ্যমে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এক কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
তবে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি মাহফুজা আক্তার।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, দুদক নীতিমালার ভিত্তিতেই অনুসন্ধানপর্বে সম্পদ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য তার বক্তব্য নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগটির তদন্ত চলছে।
২০০৭ সালে প্রযোজক হিসেবে বিটিভিতে যোগ দেন মাহফুজা আক্তার। এরপর থেকে বিটিভির বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি তাকে বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জিএম হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম-এর দায়িত্ব পালন করছিলেন