প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৪ জন শিক্ষার্থী, সবাই অনুপস্থিত 

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত রেজিস্ট্রার অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪ জন। ওই বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন সিএনএড (পিটিআই ট্রেনিং-এ)। অবশিষ্ট ৩ জন বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করতে আসে না প্রতিষ্ঠানে।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে বাঙালি নদীর পূর্বপ্রান্তে নিভৃত পল্লী এলাকায় অবস্থিত পশ্চিম পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৮ সালে স্থাপিত। ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টিতে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়, যা ৮ বছর আগে উপজেলা প্রকৌশলী অধিদফতর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে বিদ্যালয়টিতে অন্য কোনো ভবন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই বসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ ও পাঠদান করতে হয়।
বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ওই বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৮ জন।

ওই বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়েনি। এমনকি লেখাপড়ার মান নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ৩ জন শিক্ষক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে দেখা যায়নি। এসময় স্থানীয় অভিভাবকরা বলেন, এ দৃশ্য একদিনের নয়, প্রতিদিনের।
স্থানীয় ওয়াহাব সরকার ও লিটন মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার এ রকম। শিক্ষকরা আসেন যখন-তখন, চলে যান নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী। তাই মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এই বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চান না।
তারা আরো জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার বরাবর মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। এমনকি শিক্ষা বিভাগের তদারকি নেই তেমন।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি ২০১৬ সালের জুন মাসে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে একই অবস্থা দেখছেন তিনি। তবে এজন্য তিনি আশপাশের পরিবেশ ও অভিভাবকদের দায়ী করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন বেবী জানান, শুধু এদিনই তাদের বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। অন্যদিন ৮-১০ জন করে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। তবে তারা নিয়মিত আসেন বলেও জানান।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনায়েতুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে কম। তবে একেবারেই কেউ বিদ্যালয়ে আসে না; এ সম্পর্কে কেউ তাকে জানাননি।
তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির জন্য অভিভাবক সমাবেশ করে অভিভাবকদের সচেতন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরা সচেতন হলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *