চিন্ময়কাণ্ডে’ আরো এক মামলা, সাবেক কাউন্সিলরসহ আসামি ৭৯

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আরো একটি মামলা হয়েছে। এতে সাবেক কাউন্সিলরসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন খুলশী থানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী।

মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক জহুর লাল হাজারী, নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, নগর যুব মহিলা লীগ নেত্রী ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সমীর কুমার দে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপন কান্তি নাথ, ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত আহমেদ, কাজী তানভীর প্রমুখ। মামলার বাকি আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের এডিসি কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ২৬ নভেম্বর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য তিনি একজন আইনজীবীর চেম্বারে যান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় দেখতে পান- ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকন সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান করছেন। বাদির মাথায় টুপি দেখে আসামিরা ‘শিবির ধর, শিবির ধর’ বলে মারধরের জন্য এগিয়ে আসেন। 

তখন বাদি ভীত হয়ে দৌড়ে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে অর্থাৎ মেথরপট্টিতে ঢুকলে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাত একজন লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। তখন আসামি বিজয় হাতে থাকা ছোরা দিয়ে জবাই করারও হুমকি দেন। 
পরে উপস্থিত জনতা এগিয়ে গেলে আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর তিনি অটোরিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর কোতোয়ালি থানার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপরই আদালত এলাকায় শুরু হয় তার অনুসারীদের তাণ্ডব। কারাগারে নেয়ার জন্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানটি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে  চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় ২৯ নভেম্বর রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। এতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
একইদিন কোতোয়ালি থানায় আরো একটি মামলা করেন আলিফের বড়ভাই খানে আলম। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।

এর আগে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। নতুন মামলাটি নিয়ে ২৬ নভেম্বর আদালত এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির কথা ছিল। কিন্তু তার পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আগামী ২ জানুয়ারি শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।

আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার ১২ আসামিকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ডে যাওয়া ১২ জন হলেন- আমান দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, সুমিত দাস, বিশাল দাস, সনু দাস মেথর, সুমন দাস, রাজেশ দাস, দুর্লভ দাস, জয় নাথ ও অজয় সূত্রধর চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *