বাড়ি দেওয়ার কথা বলে নারীকে ‘বিধবা’ বানালেন মেম্বার

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মেম্বারের বিরুদ্ধে বাড়ি দেওয়ার কথা বলে অসহায় এক নারীকে বিধবা বানানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তামূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। 

জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড় দল গ্রামের দিনমজুর নুরুজ্জামানের স্ত্রী মমতাজ বেগম। বড় দল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তার উপর নির্মিত ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। সেখানেই ছোট একটি দোকানের পাশাপাশি দিনমজুর স্বামীর উপার্জনের টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। তিন বছর আগে ওই গৃহবধূর স্বামী কারাগারে থাকা অবস্থায় বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাসে কৌশলে ভোটার আইডি কার্ডসহ নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ওয়ার্ডের সদস্য সোবার আলীর বিরুদ্ধে।
অনেক কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়েও মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাই সরকারি একটি ঘর জোটেনি মমতাজের কপালে। তবে, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস উল্টো মমতাজ বেগমকে সমাজের কাছে প্রতারক বানিয়েছেন অভিযুক্ত মেম্বার সোবার আলী। সরকারি ঘর দেওয়ার আশ্বাসে টাকা নিয়ে জীবিত স্বামী নুরুজ্জামানকে মৃত দেখিয়ে মমতাজ বেগমকে বানানো হয়েছে বিধবা। সেই সঙ্গে সরকারের বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের তালিকাভুক্ত করা হয় তাকে। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ১১ কিস্তিতে তিন বছরেরও বেশি সময় ভাতা প্রদান করা হয় তাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

এ বিষয়ে জানতে ঘটনাস্থলে গেলে কথা হয় মমতাজ বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী জেলহাজতে থাকায় দিশেহারা অবস্থায় একটি মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের আশায় মেম্বার ঘর দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তিনি টাকা দেন। এখন ঘর তো দেয়নি উল্টো আমাকে বিধবা ভাতা করে দিয়েছে। বলেছে কয়েকদিনের মধ্যে ঘর দেওয়া হবে।
মমতাজের স্বামী নুরুজ্জামান বলেন, আমি না থাকায় অসহায় ছিলো আমার স্ত্রী। ঘরের লোভ দেখিয়ে মেম্বার টাকা নিয়ে আমাকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছে।

মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইয়াকিন আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্বদ্ধে অবগত নন উল্লেখ করে বলেন, পূর্বের মেম্বার তার ভাতার কার্ড করে দিয়েছে। তবে, আপনি মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছর অতিবাহিত হলেও কেন ব্যবস্থা নেননি জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে, মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান প্রামানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টির ব্যাপারে অবগত নন বলে দায়সারা বক্তব্য দেন তিনি। বলেন, ভাতাভোগীর সংখ্যা অনেক। আমার পক্ষে সবার খবর নেয়া সম্ভব নয়।

জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানোর কারণ জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ওয়ার্ড সদস্য সোবার আলী। তিনি বলেন, আমি কোন অন্যায় করিনি। কোনো প্রকার দুই নম্বরী কাজের সঙ্গে জড়িত নন বলে উল্লেখ করেন।
ঘটনার বিষয়ে অবগত নন উল্লেখ করে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন পার্বতীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *