তেঁতুলিয়ায় চার ভুয়া সাংবাদিক আটক, ক্যামেরাম্যান পলাতক

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগে আটক হয়েছেন চার ভুয়া সাংবাদিক। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি এনায়েত কবীর।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার তেঁতুলিয়া শালবাহান দাখিল মাদরাসা হতে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, আল হেদায়েতুল্লাহ সিদ্দিকী (২৫), আব্দুর রহিম (২৫), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), গাড়িচালক অহিদুল ইসলাম (৩৫)। 
এ সংঘবদ্ধের মধ্যে পালিয়ে গেছেন ক্যামেরাম্যান হামিদুল ইসলাম। তাদের মধ্যে আল হেদায়েতুল্লাহ সিদ্দিকী নীলফামারীর সদরের কিসামত পঞ্চপুকুর এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে, আব্দুর রহিম দিনাজপুর খানসামা এলাকার নদীপাড়া এলাকার ইসকিন্দার আলীর ছেলে, গাড়িচালক অহিদুল ইসলাম নীলফামারীর সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে ও দেলোয়ার হোসেন দিনাজপুর খানাসামার আব্দুস সামাদের ছেলে। পলাতক ক্যামেরাম্যান হামিদুল ইসলাম নীলফামারীর পঞ্চপুকুর সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

তাদের মধ্যে হেদায়েতুল্লাহ দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি, আব্দুর রহমান দৈনিক শিক্ষা ডটকম রংপুর ব্যুরো চিফ ও দেলোয়ার হোসেন নীলফামারী জেলার স্টাফ রিপোর্টার বলে পরিচয় দেন।
জানা যায়, দুপুরে একটি মাইক্রোবাস করে সাংবাদিক পরিচয়ে তেঁতুলিয়ার শালবাহান দাখিল মাদরাসায় যান ওই ভুয়া পাঁচ সাংবাদিক। মাদরাসায় প্রবেশ করেই মাদরাসার সুপারের কাছে তারা বিভিন্ন তথ্য চেয়ে বসেন। এরমধ্যে মাদসারার সুপার রফিকুল ইসলাম তথ্য নিতে লিখিতভাবে প্রশ্ন দিতে বললে তারা বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শন করলে স্থানীয় সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী। পরে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বললে অসংলগ্ন পাওয়া যায়। একপর্যায়ে তারা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। 

এ সময় তেঁতুলিয়ার আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ নিয়ে হাজির হন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। আলহাজ ডালিম উদ্দিন মহিলা দাখিল মাদরাসা, মাঝিপাড়া শালবাহান রোড দাখিল মাদরাসা হতে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী মাদরাসার শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিকেলে তাদেরকে তেঁতুলিয়া নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বীর কার্যালয়ে নেয়া হলে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সঠিকভাবে তথ্য দিতে না পেরে তারা প্রতারক বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। এ সময় তারা তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান হতে ৯ হাজার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে সে টাকা ফেরত দিতে চান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদেরকে মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে থানা হেফাজতে নেয়া হয়।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, তারা সাংবাদিকতার নামে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরাও খেয়েছেন।
শালবাহান দাখিল মাদরাসার সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরের আগেই একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আমাদের মাদরাসায় প্রবেশ করে। মাদরাসায় ঢুকেই তথ্য চাইতে শুরু করেন। আমি বলি, কী তথ্য জানতে চান তা লিখিতভাবে দিতে বললে তারা আমাকে কিভাবে তথ্য নিতে হয় হুমকি প্রদর্শন করে। তাদের আচরণ দেখে সন্দেহ হলে বিষয়টি আমি আমাদের শিক্ষা অফিসারকে জানাই। তারা বেশ কয়েকটি মাদরাসায় গিয়ে রিপোর্টের ভয়ভীতি দেখি টাকা নিয়েছে জানতে পারি। পরে তাদেরকে ইউএনও স্যারের কার্যালয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় তারা প্রতারক বলে স্বীকার করলে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

তবে ওই ভুয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানান, তারা পেশায় সাংবাদিক। তারা রোববার (২৫ নভেম্বর) রংপুর থেকে তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছিলেন। পেশাগত সাংবাদিক হওয়ায় তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পজিটিভ রিপোর্ট করতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। টাকা নেয়ার কথাও স্বীকার করেন তারা। তারা ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী বলেন, দুপুরে শালবাহান দাখিল মাদরাসা থেকে ফোনে জানতে পারি সেখানে কতিপয় কয়েকজন সাংবাদিক গিয়ে ঝামেলা করছেন। খবর পেয়ে দ্রুত মাদরাসায় গিয়ে মাদরাসার সুপার, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ শুনি। পরে ওই পাঁচজনের সঙ্গে কথা বললে কথার অসংলগ্নতা পাই। ওই সময়ের মধ্যে তারা আরও কিছু মাদরাসায় গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হই। পরে তাদেরকে আমাদের ইউএনও স্যারের কাছে নিয়ে যাই।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি মো. এনায়েত কবীর বলেন, দুপুরে তেঁতুলিয়ার শালবাহান দাখিল মাদরাসার সাংবাদিক পরিচয়ে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে প্রথমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আনা হলে সেখানে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সন্ধ্যার পর তাদেরকে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *