বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছর থেকে রাজপথে সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে। কিন্তু সরকারের পতন তো দূরের কথা, উল্টো মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের। এরপর ছাত্র-জনতার হাত ধরে আসা সেই সফলতা তাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু অবৈধ দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হামলা, মামলা, মাদক ব্যবসা, ভাঙচুরের মতো অভিযোগ যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অভিযোগ এসেছে বিস্তর।
অন্যদিকে, রাজনীতির মাঠ থেকে এক সময়ে ছিটকে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা রয়েছেন বেশ নির্ভার। ৫ আগস্টের আগের সরকার কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হওয়া দলটির নেতাকর্মীরা এখন নিজেদের ঘর গোছাতেই বেশি সময় ব্যয় করছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগে দলটির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন নিজেদের পরিচয় গোপন রাখলেও এখন তারা প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সকল ধরনের কার্যক্রম।
আওয়ামী লীগের পতনের পরপরই শুরু হয় হামলা, মামলা, ভাঙচুর, অবৈধ দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ড। এমন কি যাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপি আন্দোলন করেছে, সেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রক্ষা করতে তাদের কাছ থেকেও বিপুল চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীর নামে। অবস্থা বেগতিক দেখে নড়েচড়ে বসেন কেন্দ্রসহ স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। যারা এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় দলীয় পদক্ষেপ। শোকজ নোটিশ আর বহিষ্কার করা হয় বেশকিছু নেতাকর্মীকে।
তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেভাবে শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে দলের অভ্যন্তরেই।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। সংগত কারণেই এখানে দলাদলি থাকবে। যারা পদ-পদবি বঞ্চিত, তারা অন্যের নামে কুৎসা রটাবে। ঘটছেও তাই।
তবে দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে খুলনা মহানগর বিএনপি কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কখনোই কোনো টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করে চলেছে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসতে পেরে দলীয় নেতাকর্মীরাও রয়েছে খোশ মেজাজে।
দলীয় সূত্র জানায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবার পর অনেকটা অন্তরালে চলে যান দলের নেতাকর্মীরা। নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে হঠাৎ হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করে পত্রিকায় খবর বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়েছে দলটিকে। মানবতাবিরোধী মামলায় একের পর এক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার আর জেলে যাওয়ার কারণে জামায়াত নামে কোনো রাজনৈতিক দল রয়েছে তা ভুলতে বসেছিলেন বাংলাদেশ। সেই পরিস্থিতি এখন না থাকায় নির্বিঘ্নে একের পর এক অনুষ্ঠান করে আবারও রাজনীতির মাঠ গরম করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।